Skip to main content

ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯ টি - দলিল সহ


০১ প্রশ্ন: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রি করার বিধান ?

উত্তর: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রিওয় জায়েজ। যেমন আমাদের দেশে প্রচলিত ফ্রিজ, ফার্নিচার, ফ্ল্যাট ইত্যাদি দুই পদ্ধতিতে বিক্রি করা হয়। নগদ দাম দিয়ে কিনলে কম মূল্য আর কিস্তিতে কিনলে  বেশি মূল্য। ফুকাহায়ে কেরাম এ পদ্ধতিকে বৈধ ঘোষনা করেছেন। যেহেতু এখানে সুদের সম্ভাবনা নেই। কেননা পন্য এবং মূল্য একই জিনিসের নাহলে বাকিতে বা বাকিতে বিক্রি করা জায়েজ। তাই এ  জাতীয় ক্রয় বিক্রয় জায়েজ।
(হেদায় ৩/৭৯, আলমগীরী ৩/১৩৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪০)

০২ প্রশ্ন: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করার বিধান ?

উত্তর: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করা হারাম। কেননা মানষের প্রত্যেকটি অঙ্গকে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা দিয়েছেন, তাই সমস্ত মানুষের কোনো অঙ্গ বিক্রিকে ফুকাহায়ে কেরাম নাজায়েজ ঘোষনা করেছেন। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে মানুষের নখ, চুল, রক্ত ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে, যা সম্পূর্ন নাজায়েজ। তবে কঠিন বিপদের মূহুর্তে রক্ত পাওয়া নাগেলে, রক্ত কিনার অনুমতি বয়েছে, কিন্তু বিক্রি সর্বাবস্থেয় নাজায়েজ। আওর স্বাধীন মানুষ বা তার কোন অঙ্গ বিক্রি তো কঠিন গোনাহ। বর্তমানে আশংকাজনক হাওরে স্বাধীন মানুষ এবং কিডনী, চক্ষু সহ মানুষের বিভিন্ন দামি অঙ্গ বিক্রির প্রচলন ঘটেছে। যার ফলে বিভিন্ন সময় পাচার কারীরা শিশুদের, নারীদের এমনকি পুরুষদেরকেও অপহরন করে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। মানুষের সাথে এ জাতীয় আচরন নিঃসন্দেহে বাষ্টর্দ্রোহিতার অপরাধ। যারা এ জাতীয় কর্ম কান্ড করে, তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। অছাড়াও মানুষ এক্সিডেন্ট করলে মর্গে নিয়ে অনেক অঙ্গ রেখে দেয়া হয়, এ সবই নাজায়েজ। মোট কথা হল মানুষের যে কোনো অঙ্গ বিক্রি করা হারাম। (হেদায়া ৩/৫৫, কাযীখান ২/১৩৩, শামী ৭/২৩৫-২৪৫)

০৩ প্রশ্ন: আমি দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনে বাসায় নিয়ে আসলাম ডিমগুলো ভঙ্গার পর দুটি ডিম নষ্ট পাই। প্রশ্ন হল, ডিম দুটির পরিবর্তে দোকান থেকে অন্য দুটি ডিম আনতে পারবো কি না ? উল্লেখ্য ক্রয়ের পর বেশিক্ষন বাসাতে রাখা হয়নি।

উত্তর: আপনি নষ্ট ডিম গুলোর মূল্য ফেরত নিতে পারবেন, তবে বিক্রেতার সম্মতিক্রমে তার পরিবর্তে অন্য দুটি ডিম ও ফেরত নিতে পারবেন।
(শামী ৭/১৯৬, বাদায়েউসসানায়ে ৪/৫৫৯, ফাহুল কাদীর ৬/৪১৯)

০৪ প্রশ্ন: আমি আমার টাকা পরসা হেফাজতের জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলতে চাই তাই জানতে ইচ্ছুক কোণ ব্যাংকে একাউন্ট খোলা জায়েজ হবে। না হয় বর্তমান যুগে আমার সম্পদ হেফাজতের পদ্ধতি কি হবে ?
 
উত্তর: ইসলামে সুদ পরিষ্কার হারাম। সুদি লেনদেন করা কুরআনের ভাষায় আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার নামান্তর। সুদি লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্টতা, সহায়তা ও মারাত্মক  গোনাহ । যেহেতু বর্তমান প্রচলিত ব্যাংকগুলো সুদি ব্যবস্থাপনার  উপর পরিচালিত তাই উওম হল, ব্যাংকে টাকা না রাখা। তবে একান্ত প্রয়োজনে ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্টে টাকা পয়সা রাখা যেতে পারে সেহেতু যে ব্যাংকে কারেন্ট  রয়েছে তার মধ্যে একাউন্ট খুলতে পারবেন। কারন এতে টাকা রাখা হলে সুদে লাগানো হয় না।
(মুহাম্মাদিয়া ২৪/৩৬৬, ফিকই মাসায়েল ১/৪২৩, ফাতুয়ায়ে আসমানি ৩/২৭৩-২৬৮)

০৫ প্রশ্ন: অনেক সময় ফিক্সড মূল্য নয় এমন পন্য ক্রয় –বিক্রয়ের সময় ক্রেতা বিক্রেতার সাথে দর কষাকষী করে। মনপুত হলে বিক্রেতা বিক্রি করে। নতুবা ক্রেতা চলে যায়। অনেক সময় ক্রেতা কিছু দূর চলে গেলে বিক্রেতা দাক দেয়। প্রশ্ন হলো ডাক  দেওয়ার পর ক্রেতা ক্রয় করতে বাধ্য কি না ? ক্রয় না করে চলে গেলে তিরষ্কারের পাত্র হবে কি না ?

উত্তর: ক্রেতার প্রস্তাবিত মূল্যে বিক্রিকরতে রাজী না হওয়ার পর ক্রেতা চলে গেলে বিক্রেতা ডাক দেওয়ার পর ক্রেতা তা ক্রয় করতে বাধ্য নয়। যেহেতু মজলিস ভিন্ন হয়ে গিয়েছে তাই ক্রয় বিক্রয় আকদ হয়নি এবন পন্য না নেওয়ার কারণে তিরষ্কারের উপযুক্ত হবে না।
(বুখারী ১/২৭৯, ফাতহুল কাদীর ৬/২৩৫, তাতারখানীয়া ৮/২২২)

০৬ প্রশ্ন: আমার স্বামী বিদেশ থাকে। বাড়িতে অনেক সামগ্রী নষ্ট হয়, অকেজো হয়ে পড়ে। এগুলী সব সেয়ামীর কেনা । প্রশ্ন হল , স্বামীর অনুমতি ছাড়া এসকল আসবাব আমি বিক্রি করতে পাওরব কি ?

উত্তর: সেয়ামির অনুমতি ছাড়া বাড়ীর পুরাতন সামগ্রী গুলো বিক্রি করা আপনার জন্য জায়েজ হবে না  যদি ও তা নষ্ট এবং  অকেজো হয়ে যায় । তবে পেতি বার যে কোণ জিনিস বিক্রি করার পূর্বে অনুমতি নেওয়া জটিল বিধায় আপনি এধরনের ছোট খাট জিনিস বিক্রি করার জন্য পুর্ব থেকে ব্যপক অনুমতি নিয়ে নিতে পারবেন ।
(কাওয়াদুল ফিকহ ১১০, শামী ৭/৩১১,হাক্কানীয়া ৬/১০৮)

০৭ প্রশ্ন: আমি চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিনেছি  এক লক্ষ টাকা নগদ, আর তিন লক্ষ টাকা বাকী, প্রতিমাসে আমি দশ হাজার টকা মূল্য পরিশোধ করি আর তিন লক্ষ টাকার লাভ বাবদ ছয় হাজার টাকা প্রদান করি । প্রশ্ন হল বিক্রেতার জন্য এভাবে লাভের টাকা গ্রহন করা বৈধ হবে কি ?

উত্তর: না, বৈধ হবে না। কেননা বাকী তিনলক্ষ টাকা ঋন আর ঋনের উপর লাভ গ্রহন করা সুদ, যা পরিস্কার হারাম।
(সূরায়ে বাকার ২৭৫-২৭৮, ফাতহুল কাদীর ৭/২৩২, কাওয়াদুল ফিকহ ১০২)

০৮ প্রশ্ন: আমি চট্রগ্রাম যাওয়ার পথে বিবাড়িয়া ষ্টেশনে একটি বালকের কাছে থেকে এক বোতল পানি কিনি মূল্য পরিশোধ করার পূর্বেই ট্রেনটি ছেড়ে দেয়, তার কোন পরিচয় আমার জানা নেই, চেহারাও বলতে পারব না , এখন আমার করনীয় কি ?

উত্তর: আপনি পানির ক্রয় মূল্য মালিকের পক্ষ থেকে গরিবকে সদকা করে দিবেন।
(শামী ৬/৪৩৪, হিন্দীয়া ৫/৪০৪, মাহমুদিয়া ২৩/৩৭৮)

০৯ প্রশ্ন:কিস্তিতে কোন বস্তু ক্রয় বিক্রয় শরিয়তের দৃষ্টিতে কেমন ? আমি একটি সেলাই মেশিন কিনেছি যা ১২ মাসে ৬ কিস্তিতে নয় হাজার টাকা মূল্যে পরিশোধ করতে হবে, তবে আমি যদি এটা নগদ ক্রয় করতাম তাহলে সাড়ে সাত হাজার টাকায় ক্রয় করতে পারতাম, প্রশ্ন হল, টাকা পরিশোধের সনয়ের উপর ভিত্তি করে পন্যের মূল্য বৃদ্ধি করা সুদ কি না ? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর: সময়ের উপর ভিত্তি করে পন্যের মূল্য বৃদ্ধি করা জায়েজ। তবে শর্ত হল, চুক্তির মজলিসে পন্যের মূল্য চূড়ান্ত করে নিতে হবে, হা, মূল্য পরিশোধ করতে দেরী হলে পূনরায় মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। (বাইউবিত তাকছিত ১/১১, হেদায়া ৩/৫৮, জাদিদ ফিকহী মাসায়েল ১/৩৯০, মাহমুদিয়া ২৪/১৯৩)

Comments

Popular posts from this blog

নামাজ প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯৬ টি - দলিল সহ  ০১ প্রশ্ন: সেজদার জায়গায় ধুলা-বালি থাকলে নামাজের মধ্যে ফুঁ’দিয়ে তা দূর করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?  উত্তর: সেজদার জায়গায় ধুলাবালি থাকলে যদি তা ফুঁ দিয়ে দূর করার কারণে আওয়াজ সৃষ্টি হয় তাহলে নামাজ-নষ্ট হয়ে জাবে,অন্যথায় নামাজ নষ্ট হবে না,তবে-ইচ্ছাকৃত এরূপ করা মাকরূহ।আর যদি সেজদার জায়গায় কষ্টদায়ক কোন কিছু থাকে যার কারণে সেজদা করতে অক্ষম হয় তখন তা হাত দিয়ে সরিয়ে দিবে। (হিন্দীয়া ১/১৫৯, ক্বাযীখান ১/৭৪) ০২ প্রশ্ন: মহিলারা বৈঠকের সময় কিভাবে বসবে, পুরুষদের মতই-নাকি তাদের থেকে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে ? উত্তর: মহিলারা বৈঠকের সময় পুরুষদের মত বসবেনা,বরং সে তার বাম নিতম্বের উপর বসবে এবং তার উভয়-পা ডান দিকে বের করে দিবে। ( হিন্দীয়া ১/১৩৩, রাহিমীয়া ৫/৭৫) ০৩ প্রশ্ন:নামাজে কেউ দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না? উত্তর: কোন ব্যক্তি যদি ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে ও ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে সূ্রা মিলানোর পূর্বে দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।আর যদি সূ্রা মিলানোর পরে দ্বিতীয়বার প

পবিত্রতা প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৪৮ টি - দলিল সহ ০১ প্রশ্ন: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়ার বিধান কি ? উত্তর: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়া ফরয।   (শামী ১/৩১১, বাদায়েউসসনায়ে ১/১৪২, হাক্কানীয়া ২/৫২১) ০২ প্রশ্ন: অনেকে বলে থাকেন, অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়, এতে সওয়াব কমে যায়, কথাটি কি সঠিক ? অজুর পর হাতমুখ মোছার বিধান কি ? জানালে কৃতঙ্গ থাকব।  উত্তর: অজুর পর কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছাতে কোন সমস্যা নেই, বরং কেউ কেউ একে অজুর আদব এবং মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সুতরাং যারা বলে যে অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়। এতে সওয়াব কমে যায় তাদের এ কথা সঠিক নয়।  (শামী ১/২৭৯, হিন্দীয়া ১/৬৫, দারুল উলুম ১/১৩১ ) ০৩ প্রশ্ন: আমি মেহেদী পাতা বেটে হাতে দেই পরবর্তিতে আমার মেয়ে জানায় মেহেদীর মধ্যে নাপাক পানি পড়ে তা নাপাক হয়ে গেছে, এখন আমার জানার বিষয় হল নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর হাত পবিত্র করার পদ্ধতি কি। উত্তর: নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর পরিষ্কার পানি বের হওয়া পর্যন্ত হাত ধৌত করলে হাত পবিত্র হয়ে যায়। যদিও রং বাকি থাকে। (শামী ১/৫৯০,  হিন্দীয়া ১/৯৬, ক্বাযীখান ১/১