প্রশ্ন আছে ৭ টি - দলিল সহ
০১ প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির মোচ-চুল নখ ইত্যাদি কাটার বিধান।
উত্তর: মৃত ব্যক্তির মোচ-চুল,নখ কর্তন এবং তার চুল দাড়ি আঁচড়ানো বা তার চোখে সুরমা লাগিয়ে দেয়া ইত্যাদি সবি নাজায়েজ। এ সমস্ত কাজ তো জীবিত ব্যক্তির প্রয়োজন, মৃত ব্যক্তি তো এসবের মুখাপেক্ষী নয়। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের থেকে এ কাজগুলো প্রমাণিত নয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ গোসল দাতাই শরঈ জ্ঞানের অভাবে এ কাজগুলো করে থাকে। আলেমদের উচিৎ এ মাসাআলাগুলো আলোচনা করে লোকদেরকে বুঝিয়ে দেয়া। (হেদায়া ১/১৭৯, শামী ৩/৮৯, দারুল উলুম ৫/২৪৮)
০২ প্রশ্ন: কাফনের কাপড়ে কালিমা লেখার বিধান।
উত্তর: কাফনের কাপড়ে কুরআনের আয়াত বা কালিমা ইত্যাদি লেখা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। কেননা এর দ্বারা কুরআনের বা কালিমার সম্মানহানী হয়। আমল খারাপ হলে কাফনের সাথে পুরা কুরআন দিয়ে দিলেও কোনো লাভ হবে না। আমল ভাল হলে তো রাসূল ও সাহাবীদের রীতিনীতির বিপরীত কাফনের কাপড়ে লেখার প্রশ্নই আসে না। উল্লেখ্য যে লাশের খাঁটটির উপর যে চাদর ব্যবহার করা হয়, তাতে কালিমা বা দরুদ লেখা চাদর ক্রয়করে মসজিদে দেয়া বা তার দ্বারা লাশ ঢাকা নাজায়েজ (শামী ৩/১৫৭, দারুল উলূম ৫/৪৫০, মাহমূদিয়া ১২/৩৪)
০৩ প্রশ্ন: গায়েবানা জানাজার বিধান।
উত্তর: হানাফী মাযহাব মতে গায়েবানা জানাজা পড়া নাজায়েজ। কেননা জানাজার নামাযের জন্য শর্ত হল লাশ সামনে উপস্থিত থাকা। সুতরাং অন্য মাযহাবের আমল দেখে প্রভাবিত হয়ে গায়েবানা জানাজার ব্যবস্থা বা তাতে অংশ গ্রহণ করা নাজায়েজ, আমাদের দেশের অনেক দল বা সংগঠন অনেক সময় গায়েবানা জানাজার ডাক দেয়। তাদের আনুগত্য করতে গিয়ে নিজ মাযহাবের সিদ্ধান্ত পদদলিত করা কারো জন্য বৈধ নয়।
(শামী ৩/১০৪, দারুল উলূম ৫/৩০৮, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২১০)
০৪ প্রশ্ন: লাশ বহনের সময় করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদি।
উত্তর: লাশ বহনকারীদের জন্য দ্রুত চলা এবং অন্যদের জন্য চুপচাপ লাশের পেছনে পেছনে চলা মুস্তাহাব। এবং লাশ বহনের সময় উচ্চস্বরে কালিমায়ে শাহাদাত দোয়া দরুদ, কুরআনুল কারীমের আয়াত বা অন্য কোন জিকির আজকার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কেননা লাশ বহনের সময় রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম চুপচাপ দ্রুত চলতেন। উচ্চস্বরে কোন দু’য়া দরুদ পড়তেন না। তবে মনে মনে দু’য়া ইস্তেগফার বা অন্য কোন আমল করা যেতে পারে। লাশ বহনের সময় আমাদের দেশের উচ্চস্বরে কালিমা পড়ার প্রথা সম্পূর্ণই বর্জনীয়।
(শামী ৩/১৩৮, দারুল উলূম ৫/২৮৪, আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৩৮)
০৫ প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির নামে তিন দিনা চল্লিশা করার বিধান।
উত্তর: মৃত ব্যক্তির নামে তিন দিনা, চার দিনা, ত্রিশা, চল্লিশা বা মৃত্যু বার্ষিকী ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ এ জাতীয় খানার আয়োজন বা অনুষ্ঠানের দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোন উপকার বা সওয়ার হয়না। বরং যদি সে এ জাতীয় অনুষ্ঠান করার জন্য অসিয়ত করে যায় বা তার ওয়ারিশগণ তার মৃত্যুর পর এ জাতীয় অনুষ্ঠান করবে জেনেও নিষেধ না করেযায় তাহলে উল্টো তার কবরে গোনাহ পৌছবে। আফসোসের বিষয় হল, আমরা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করি, অথচ নিজেদের মর্জির খেলাফ হলে শরীয়াতের বিধানকে সম্পূর্ণ অমান্য করি। মানুষের মন জয়ের জন্য বা নিজের দুনিয়াবি নাম-দাম টিকিয়ে রাখার জন্য খোদার নাফরমানী করতেও কুণ্ঠাবোধ করিনা। অনেক সময় নিজের অর্থ না থাকা সত্তেও ধার কর্য করে হলেও এমনকি সুদে টাকা নিয়েও মেজবানির নামে লক্ষ টাকা খরচ করছি। বাস্তবিক পক্ষে দ্বীনের মুহাব্বত ও আল্লাহর ভয় থাকলে আমরা এ জাতীয় গোনাহের কাজে লিপ্ত হতাম না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুক।
(আলমগীরী ১/১৬৮, শামী ৩/১৪৮, আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৩৫)
০৬ প্রশ্ন: কবর পাকা করা এবং কবরের চার পাশ পাকা জায়েজ কি না ?
উত্তর: কবর পাকা করা ও কবরের চার পাশের দেওয়াল পাকা করা জায়েজ নেই, মাকরুহ ।
(সহীহ মুসলিম ১/৩১১, শামী ৩/১৪৪, বাহরুররায়েক ২/৩৩৯-৩৪০)
০৭ প্রশ্ন: কবরে দাফন করার পর আত্মীয় স্বজন কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করার ব্যাপারে আমাদের এলাকায় এর বেশ প্রচলন রয়েছে বলা হয় এতে কবরস্থ ব্যক্তি সওয়াল জওয়াবে সাহস পায় কথাটি কতুটুকু সঠিক ?
উত্তর: উক্ত প্রচলনটি মৌলিকভাবে সঠিক, কবরে দাফন করার পর কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করা মুস্তাহাব। (শামী ৩/১৬৮, হিন্দীয়া ১/২২৭, সূনানে আবু দাউদ ২/৭৫৯)
Comments
Post a Comment