Skip to main content

বিবাহ প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৭ টি - দলিল সহ


০১ প্রশ্ন: পুরুষের জন্য যে সকল মহিলাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েজ, বিবাহ করা হারাম ক্রমানুসারে 
কুরআন ও সুন্নাহর দলীল উল্লেখ করে জানাবেন। 

উত্তর: পুরুষের জন্য মাহরাম অর্থাৎ যে সকল নারীর সাথে দেখা করা জায়েজ, বিবাহ করা হারাম  
তাদের তালিকা নিম্মরুপ। 
(ক) বংশগত 
            (১) মা 
            (২) দাদী, নানী, তাদের মা উর্ধস্তন
            (৩) মেয়ে, মেয়ের মেয়ে, অধস্তন এবং ছেলের মেয়ে, ছেলের মেয়ের মেয়ে অধস্তন
            (৪) আপন বোন, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রিয় বোন 
            (৫) খালা, অর্থাৎ আপন মায়ের সহোদরা বোন, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রিয় বোন 
            (৬) ফুফু অর্থাৎ বাপের সহোদরা বোন, বৈপিত্রিয় বোন, বৈমাত্রিয় বোন 
            (৭) ভাগ্নি অর্থাৎ সহোদরা বোনের মেয়ে, বৈমাত্রিয় বোনের মেয়ে, বৈপিত্রিয় বোনের  
                 মেয়ে
            (৮) ভাতিজী অর্থাৎ সহোদর ভাইয়ের মেয়ে, বৈপিত্রিয় ভাইয়ের মেয়ে, বৈমাত্রিয় 
                 ভাইয়ের মেয়ে
(খ) দুধ সম্পর্কের
            (৯) দুধ মা 
            (১০) দুধ বোন
(গ) বৈবাহিক সূত্রে 
             (১১) শাশুড়ী তার মা অধস্তন
             (১২) স্ত্রীর মেয়ে যদি স্ত্রীর সাথে সহবাস হয় 
             (১৩) পূত্র বধু
             (১৪) পিতার স্ত্রী অর্থাৎ সৎমা । 

০২ প্রশ্ন: অধিক গরম পড়লে যামে চুল ভিজে যায়, যার ফলে খুব কষ্ট হয়। তাই আমার স্বামীর অনুমতি নিয়ে চুল খাট করা জায়েজ হবে ? হলে কতটুকু কাটা যাবে।

উত্তর: অধিক গরমের সময় বাস্তবে খুব কষ্ট হলে প্রয়োজনে এ পরিমাণ চুল কাটা জায়েজ আছে , যাতে করে কষ্ট লাঘব হবে, তবে ফ্যাশন বা পুরুষের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার জন্য চুল কাটা হারাম। 
(মেশকাত ৩৮৪, শামী ২/৪০৭, হিন্দীয়া ৫/৪১৪)

০৩ প্রশ্ন: মুসলিম মহিলার জন্য অমুসলিমের সাথে বিবাহ বসার হুকুম।

উত্তর: মুসলিম মহিলার জন্য অমুসলিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম, চাই অমুসলিম কাফের, মুশরেক, নাস্তিক, ইহুদি, খ্রিস্টান বা অগ্নিপুজক যেই হোক। কোনো অবস্থাতেই মুসলিম মহিলার জন্য মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো স্মপ্রদায়ের পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি নেই। বর্তমান যামানায় বহু সংখক স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটিপড়ুয়া মেয়ে, ভালবাসার নামে নাস্তিক, মুরতাহ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেদের সাথে সখ্য গড়ে তুলছে। এক সময় নিজ ধর্মকে জলাঞ্জলি দিয়ে, তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। যার ফলে এক সময় নিজ ধর্মকে ছেড়ে অন্য ধর্ম বা নাস্তিক্যবাদকে নিজের আসল ধর্ম বানিয়ে নেয়। শিক্ষার নামে ধর্মহীনতাই এর জন্য দায়ী। পিতা মাতা যদি নিজ সন্তান কে শিশুকাল থেকেই দীনী শিক্ষাকে পরিহার করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করত তাহলে আজ এ করুন দশা হত না। 
(শামী ৪/১৩৪, আলমগীরী ১/২৮২, দারুল উলূম ৭/৮৫৫) 

০৪ প্রশ্ন: উত্তেজনার সাথে নিজ পুত্রবধুকে স্পর্শ করার বিধান।

উত্তর: কোনো ব্যক্তি যদি নিজ পুত্র বধুর সঙ্গে যিনা করে বা উত্তেজনার সাথে কোনো ধরনের মোটা কাপড়ের আড়াল ব্যতীত , তার শরীরের কোনো অঙ্গে স্পর্শ করে কিংবা এমন পাতলা কাপরের উপর দিয়ে তার শরীর স্পর্শ করে যে, উত্তেজনার সহিত স্পর্শ করার সময় তার শরীরের গরম অনুভূত হয় বা উত্তেজনার সহিত তাকে চুমা দেয় তাহলে ঐ ব্যক্তির ছেলের জন্য তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। চাই এ স্পর্শ ইচ্ছে করে করুক বা অনিচ্ছায়, যেভাবেই হোক হারাম সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এ বিষয়টি মারাত্মক স্পর্শ কাতর। কেননা এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই বরবাহ হয়ে যাবে। তাই চলা ফেরার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
(কাযীখান ১/৩৬০, আলমগীরী ১/২৭৬, দারুল উলূম ৭/৩৩৪)

০৫ প্রশ্ন: নিজ শাশুড়ির সাথে যিনায় লিপ্ত হওয়ার বিধান।

উত্তর: কেউ যদি নিজ শাশুড়ির সাথে যিনা করে, কিংবা উত্তেজনার সাথে কোনো ধরনের মোটা কাপড়ের আড়াল ব্যতীত , তার শরীরের কোনো অঙ্গে স্পর্শ করে বা উত্তেজনার সহিত তাকে চুমা দেয় তাহলে তার জন্য নিজ স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। স্পর্শ যে ভাবেই হোক, চাই ইচ্ছা কৃত হোক বা অনিচ্ছায়। আল্লাহ না করুক যারা এ জাতীয় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে, তাদের তো দুনিয়াই জাহান্নাম হয়ে যাবে। আল্লাহর ভয় ও দীনের শিক্ষা নাথাকার দরুন , মানুষ আজ পশুর মতো জীবন যাপন শুরু করে দিয়েছে। (কাযীখান ১/৩৬১, আলমগীরী ১/২৭৬, দারুল উলূম ৭/৩২৭)

০৬ প্রশ্ন: ভিডিও কলের মাধ্যমে বিবাহের হুকুম কি ? ছেলে বিদেশে থাকে। সেখান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার অথবা মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে সরাসরি তাকে দেখে, তার থেকে ইজাব-কবুল শুনে বিবাহের আকদ করা হয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন সমস্যা আছে কি ?
বা বিবাহ সহীহ হবে কি ?

উত্তর: ভিডিও কলের মাধ্যমে অনেক লোককে শুনিয়ে ইজাব কবুল করলেও বিবাহ সহীহ হবে না। কেননা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল, ইজাব কারীর কবুলের মজলিস এক হওয়া এবং দুইজন মুসলিম পুরুষ বা ইকজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা উপস্থিত থেকে পাত্র পাত্রি বা তাদের প্রতিনিধিদের থেকে সরাসরি ইজাব কবুল শোনা। আর মোবাইলে বিবাহের ক্ষেত্রে ইজাব বা কবুল কাওরীর মজলিস আর সাক্ষীর মজলিস ভিন্ন সাক্ষীদের উপস্থিত মজলিসে সরা সরি ইজাব কবুল পাওয়া যায় না। বিধায় এ পদ্ধতির বিবাহ সহীহ হবে না । তবে যদি সহীহ পদ্ধতিতে মোবাইলে বিবাহ করতে চায়,  তাহলে ছেলে বা মেয়ে কোন একজনকে তার পক্ষ থেকে উকিল বানাবে। আর ঐ উকিল বিবাহের মজলিসে দুই জন পুরুষ বা এক জন পুরুষ দুইজন মহিলার উপস্থিতিতে তার মুয়াক্কেলের পক্ষহতে বিবাহের ইজাব করবে আর দ্বিতীয় পক্ষ সে মজলিসে ইজাব কবুল করে নিলেই বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে। (শামী ৪/৮৬-৯১, হিন্দীয়া ১/২৬৭, কাজীখান ১/৩৩২)

০৭ প্রশ্ন: সর্বনিম্ন কতটাকা মোহর ধার্য করলে বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে। উল্লেখ্য বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবে নির্ধারিত অংকে টাকার পরিমাণ জানালে উপকৃত হব।


উত্তর: সর্বনিম্ন দশ দিরহাম মোহর নির্ধারন করলে বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে, এক দিরহাম =২৫.২ রতি, সুতবেং দশ দিরহাম =(১০ × ২৫.২) =২৫২ রতি, এক তোলা =৯৬ রতি, সুতরাং ২৫২ রতি  (২৫২ ÷ ৯৬) =২.৬২৫ তোলা , যার বর্তমান বাজার মূল্য দুই হাজার একশত টাকা। এপ্রিল ২০১৬ ইংরেজী। (শামী ৪/২৩০, বাহরুররায়েক ৩/২৪৯, তাতারখানিয়া ৪/১৬৩)

Comments

Popular posts from this blog

নামাজ প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯৬ টি - দলিল সহ  ০১ প্রশ্ন: সেজদার জায়গায় ধুলা-বালি থাকলে নামাজের মধ্যে ফুঁ’দিয়ে তা দূর করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?  উত্তর: সেজদার জায়গায় ধুলাবালি থাকলে যদি তা ফুঁ দিয়ে দূর করার কারণে আওয়াজ সৃষ্টি হয় তাহলে নামাজ-নষ্ট হয়ে জাবে,অন্যথায় নামাজ নষ্ট হবে না,তবে-ইচ্ছাকৃত এরূপ করা মাকরূহ।আর যদি সেজদার জায়গায় কষ্টদায়ক কোন কিছু থাকে যার কারণে সেজদা করতে অক্ষম হয় তখন তা হাত দিয়ে সরিয়ে দিবে। (হিন্দীয়া ১/১৫৯, ক্বাযীখান ১/৭৪) ০২ প্রশ্ন: মহিলারা বৈঠকের সময় কিভাবে বসবে, পুরুষদের মতই-নাকি তাদের থেকে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে ? উত্তর: মহিলারা বৈঠকের সময় পুরুষদের মত বসবেনা,বরং সে তার বাম নিতম্বের উপর বসবে এবং তার উভয়-পা ডান দিকে বের করে দিবে। ( হিন্দীয়া ১/১৩৩, রাহিমীয়া ৫/৭৫) ০৩ প্রশ্ন:নামাজে কেউ দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না? উত্তর: কোন ব্যক্তি যদি ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে ও ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে সূ্রা মিলানোর পূর্বে দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।আর যদি সূ্রা মিলানোর পরে দ্বিতীয়বার প

পবিত্রতা প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৪৮ টি - দলিল সহ ০১ প্রশ্ন: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়ার বিধান কি ? উত্তর: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়া ফরয।   (শামী ১/৩১১, বাদায়েউসসনায়ে ১/১৪২, হাক্কানীয়া ২/৫২১) ০২ প্রশ্ন: অনেকে বলে থাকেন, অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়, এতে সওয়াব কমে যায়, কথাটি কি সঠিক ? অজুর পর হাতমুখ মোছার বিধান কি ? জানালে কৃতঙ্গ থাকব।  উত্তর: অজুর পর কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছাতে কোন সমস্যা নেই, বরং কেউ কেউ একে অজুর আদব এবং মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সুতরাং যারা বলে যে অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়। এতে সওয়াব কমে যায় তাদের এ কথা সঠিক নয়।  (শামী ১/২৭৯, হিন্দীয়া ১/৬৫, দারুল উলুম ১/১৩১ ) ০৩ প্রশ্ন: আমি মেহেদী পাতা বেটে হাতে দেই পরবর্তিতে আমার মেয়ে জানায় মেহেদীর মধ্যে নাপাক পানি পড়ে তা নাপাক হয়ে গেছে, এখন আমার জানার বিষয় হল নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর হাত পবিত্র করার পদ্ধতি কি। উত্তর: নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর পরিষ্কার পানি বের হওয়া পর্যন্ত হাত ধৌত করলে হাত পবিত্র হয়ে যায়। যদিও রং বাকি থাকে। (শামী ১/৫৯০,  হিন্দীয়া ১/৯৬, ক্বাযীখান ১/১

ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯ টি - দলিল সহ ০১ প্রশ্ন: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রি করার বিধান ? উত্তর: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রিওয় জায়েজ। যেমন আমাদের দেশে প্রচলিত ফ্রিজ, ফার্নিচার, ফ্ল্যাট ইত্যাদি দুই পদ্ধতিতে বিক্রি করা হয়। নগদ দাম দিয়ে কিনলে কম মূল্য আর কিস্তিতে কিনলে  বেশি মূল্য। ফুকাহায়ে কেরাম এ পদ্ধতিকে বৈধ ঘোষনা করেছেন। যেহেতু এখানে সুদের সম্ভাবনা নেই। কেননা পন্য এবং মূল্য একই জিনিসের নাহলে বাকিতে বা বাকিতে বিক্রি করা জায়েজ। তাই এ  জাতীয় ক্রয় বিক্রয় জায়েজ। (হেদায় ৩/৭৯, আলমগীরী ৩/১৩৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪০) ০২ প্রশ্ন: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করার বিধান ? উত্তর: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করা হারাম। কেননা মানষের প্রত্যেকটি অঙ্গকে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা দিয়েছেন, তাই সমস্ত মানুষের কোনো অঙ্গ বিক্রিকে ফুকাহায়ে কেরাম নাজায়েজ ঘোষনা করেছেন। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে মানুষের নখ, চুল, রক্ত ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে, যা সম্পূর্ন নাজায়েজ। তবে কঠিন বিপদের মূহুর্তে রক্ত পাওয়া নাগেলে, রক্ত কিনার অনুমতি বয়েছে, কিন্তু বিক্রি সর্বাবস্থেয় নাজায়েজ। আওর স্বাধীন মানুষ বা তার কোন অঙ্গ বিক