Skip to main content

রোজা প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৩৫ টি - দলিল সহ


০১ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় শিঙ্গা বা কাপিং করার হুকুম কি ?
                            
উত্তর: রোজা অবস্থায় শিঙ্গা বা কাপিং করার জায়েজ, তবে যদি শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে মাকরুহ। (হিন্দীয়া ১/২৩২, কাযিখান ১/১২৮)

০২ প্রশ্ন: আমি রোজা রেখে ঘুমিয়ে যাই এমতাবস্থায় আমার স্বপ্নদোষ হয়, এতে কি আমার রোজা ভেঙ্গে যাবে কিংবা রোজার কোন ক্ষতি হবে  ? জানালে উপকৃত হব।
                            
উত্তর: রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না। এবং রোজার কোন ক্ষতি ও হবে না। (বাদায়েউসনায়ে ২/২৩৯, কিযিখান ১/১৩০)

০৩ প্রশ্ন: রমযান মাসের এতেকাফের হুকুম কি ? এবং তা কবে এবং কতদিন করতে হয়।

উত্তর: রমজানুল মোবারকে এ’তেকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদায়ে কেফায়া এবং এ’তেকাফ করবে রমজানের শেষ দশদিন তার থেকে কম হতে পারবে না। 
(সহিহ মুসলিম ১/৩৭১, দুররুলমুখতার ৩/৪২০, হিন্দীয়া ১/২১১)

০৪ প্রশ্ন: কোন কোন দিনে শরিয়তে রোজা রাখা নিষিদ্ধ ?

উত্তর: দুই ঈদের দিন এবং তাকবিরে তাশরিকের তিন দিন অর্থাৎ যিলহজ্জ্ব মাসের ১১,১২,১৩ তারিখে রোজা রাখা নিষিদ্ধ। (হিন্দীয়া ১/২৬৩, কাযিখান ১/১২৯)

০৫ প্রশ্ন: রমজান মাসে যদি কোন হায়েযওয়ালি মহিলা দিনের কিছু অংশে অতিবাহিত হওয়ার পর পবিত্র হয় তাহলে সে দিনের বাকি অংশ কিভাবে কাটাবে ?

উত্তর: রমজান মাসে যদি কোন হায়েযওয়ালি মহিলা দিনের কিছু অংশে অতিবাহিত হওয়ার পর পবিত্র হয় তাহলে তার সে দিনের বাকি অংশ রোজা দারদের মত কাটানো ওয়াজিব। খানা পিনা ইত্যাদি করা নাজায়েজ।
(দুররুলমুখতার ৩/৩৮৩, হেদায়া ১/২২৫, বাদায়েউসনায়ে ২/২৬২)

০৬ প্রশ্ন: আমি একবার ভোর রাতে সেহরী খেতে উঠি, সময় জানার কোন ব্যবস্থাও আমার কাছে ছিলনা, আমি সাহরী খেয়ে নেই। ইতি মধ্যে এক ব্যক্তি এসে জানায় যে আরো পাঁচ থেকে সাত মিনিট পূর্বে সুবহে সাদিক হয়ে গেছে । এমতাবস্থায় আমার রোজার হুকুম কি ?

উত্তর: আপনার এই দিনের রোজা হবেনা । তবে রোজাদারের মত পানাহার ইত্যাদি পরিত্যাগ করে দিন অতিবাহিত করতে হবে এবং এই রোজার কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না। (হেদায়া ৩/৩৭৬, শামী ৩/৪৩৬, তাতারখানীয়া ৩/৩৫৬)

০৭ প্রশ্ন: আমি রোজা রেখে পুকুরে গোসল করতে নামি। কুলি করতে গিয়ে হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামান্য পানি গলার ভিতর প্রবেশ করে। এতে কি আমার রোজা ভেঙ্গে গেছে কি না ? যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে কি কাফফারা ওয়াজিব নাকি শুধু কাজা করতে হবে ?

উত্তর: যদি কুলি করার সময় আপনার রোজার কথা স্বরণ থাকে এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে পানি গলার ভিতরে চলে যায় তাহলে আপনার রোজা ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে উক্ত রোজার ক্বাযা আদায় করতে হবে।
(বাদায়েউসনায়ে ২/২২৭, হিন্দীয়া ১/২৬৫, ক্বাযীখান ১/১৩১)

০৮ প্রশ্ন: রমজানের চাঁদ দেখা গেছে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কি কি শর্ত ?

উত্তর: যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তখন একজন ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য দ্বারা রোজার চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হবে। চাই পুরুষ কিংবা মহিলা, গোলাম কিংবা আজাদ হোক। এবং যখন আকাশ পরিষ্কার থাকবে তখন এমন অধিক লোকের সাক্ষ্য দ্বারা রোজার চাঁদ দেখা সাব্যস্ত হবে যাদের সংবাদ বিশ্বাস করা যায়।
(হিন্দীয়া ১/১৯৭, শামী ২/৩৮৮, রাহিমীয়া ৭/২১৫) 

০৯ প্রশ্ন: যে দেশে ছয়মাস রাত ছয় মাস দিন সেখানের অধিবাসীরা কি ভাবে রোজা রাখবে ?

উত্তর: যে দেশে ছয়মাস রাত ছয় মাস দিন সেখানের অধিবাসীরা তার নিকটবর্তী এমন দেশ যার রাত্র-দিন স্বাভাবিক তার সময় অনুযায়ী রোজা রাখবে। (তিরমিযি ২/৪৮, শামী ২/২৮, এমদাদুল আহকাম ২/১৯)

১০ প্রশ্ন: ফরজ রোজার নিয়ত করা কি জরুরী ? এবং তা কখন করতে হবে ?

উত্তর: ফরজ রোজার জন্য নিয়ত করা জরুরী । রাত্রে নিয়ত করা উত্তম, যদিও সূর্য ঢলে যাওয়ার আগপর্যন্ত নিয়তের অবকাশ রয়েছে। (শামী ৩/৩৯৩, হিন্দীয়া ১/২৫৭, হাক্কানিয়া ৪/১৪২)

১১ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় জ্বর অথবা ব্যথার কারণে সাপোজিটরি (ডুস) ব্যবহার করলে রোজা ভাঙ্গবে কিনা ?

উত্তর: রোজা অবস্থায় জ্বর অথবা ব্যথার কারণে সাপোজিটরি (ডুস) ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, কেননা তা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। (শামী ৩/৪৩২, হিন্দীয়া ১/২৬৬, মাহমুদীয়া ১৫/১৮১)

১২ প্রশ্ন: আমি রোজা রেখে পুকুরে ডুবিয়ে গোসল করি এতে আমার কানে পানি প্রবেশ করে। জানার বিষয় হল, এতে কি আমার রোজা ভেঙ্গে গেছে ? যদি ভেঙ্গে গিয়ে থাকে তাহলে কি কাফফারা ওয়াজিব হবে ?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত সূরতে আপনার রোজা ভাঙ্গে নাই। কেননা কানে পানি প্রবেশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। তবে যদি ইচ্ছাকৃত পানি প্রবেশ করানো হয় তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে।
(শামী ৩/৪২২, কাযিখান ১/১৩০, হাক্কানিয়া ৪/১৬৫)

১৩ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় কোন ব্যক্তি ভুলে পানাহার করলে তার রোজার হুকুম কি এবং বাকি সময় কিভাবে কাটাবে ?

উত্তর: রোজা অবস্থায় কোন ব্যক্তি ভুলে পানাহার করলে তার রোজা ভাঙ্গবে না। এবং বাকি সময় পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা পূর্ণ করবে। (হিন্দীয়া ১/২৬৪, বাদায়েউসনায়ে ২/২৩৭, হাক্কানিয়া ৪/১৬৬)

১৪ প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় রমজান মাসে সাহরীর সময় লোকদেরকে জাগ্রত করার জন্য সাইলেন্ট বা বেল বাজানো হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা কি বৈধ ? আর এ আওয়াজ শুনে সাহরী করা সহিহ হবে কি ?

উত্তর: সাহরীর সঠিক সময় জানার যদি অন্য কোন মাধ্যম না থাকে এবং  রোজা ফাসেদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে , তাহলে সাহরীর সময় লোকদেরকে জাগ্রত করার জন্য ‘সাইরেন’ বা বেল বাজানো জায়েজ আছে। এবং এ আওয়াজ শুনে সাহরী করাও সহিহ আছে। 
(শামী ৯/৫৭৮, বায়যাযিয়া ৩/২১৬, মাহম্মদিয়া ১৫/১৫৬) 

১৫ প্রশ্ন: সেহরী না খেয়ে রোজা রাখলে রোজার কোন ক্ষতি হবে কি না ?

উত্তর: সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব। সুতরাং , সেহরী না খেয়ে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে।
(শামী ৩/৪৫৯, হিন্দীয়া ১/২৬২, দারুল উলূম ৬/৪৯৬)

১৬ প্রশ্ন: রোজার দিন রোজা রেখে গাছের ভেজা ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা মাকরুহ নয় কি ?

উত্তর: রোজাদারের জন্য অন্যান্য ব্যক্তিদের ন্যায় মিসওয়াক করা সুন্নাত। মিসওয়াক ভেজা অথবা গাছের কাচা ডাল হলেও কোন সমস্যা নেই। এটা মাকরুহ নয়। 
(শামী ৩/৪৫৮, হিন্দীয়া ১/২৬২, মাহমুদীয়া ১৫/১৬২)

১৭ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় ধূমপান করার হুকুম কি ?

উত্তর: রোজা অবস্থায় ধূমপান করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। এবং ক্বাযাও কাফফারা ওয়াজিব হবে। তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ধুয়া গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভাঙ্গে বেনা।
(শামী ৩/৪২১, হিন্দীয়া ১/২৬৬, আপকি মাসায়েল ৩/২৮৩) 

১৮ প্রশ্ন: ইফতারি না করে মাগরীবের নামাজের পর খানা গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন ?

উত্তর: হাদীস শরীফে সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতারী করার ব্যাপারে তাকিদ এসেছে। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী যথা সময়ে ইফতারী করাকে কল্যাণের উপর থাকা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই যথাসময়ে ইফতারী না করে মাগরিবের নামযের পর ইফতার করা সুন্নাত পরিপন্থী এবং পরিত্যাজ্য। 
(দুরুল মুখতার ১/১৫২, বায়যাযিয়া ১/৭০, হাক্কানীয়া ৪/১৫৮)

১৯ প্রশ্ন: সেহরী না খেয়ে রোজা রাখলে রোজার কোন ক্ষতি হবে কিনা ? 

উত্তর: সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব।সুতরাং সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে।
(শামী ৩/৪৫৯, হিন্দীয়া ১/২৬২, দারুল উলুম ৬/৪৯৬)

২০ প্রশ্ন: বিনীত নিবেদন এই যে, রমজানে একদিন বিকাল বেলা অতিরিক্ত মেঘ হয়। কাছে ঘড়িও ছিল না। ধারনা করি যে, সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে এবং ইফতার করি। পরক্ষণে ঘড়ি ওয়ালা এক ব্যক্তি এসে জানান, ইফতারীর এখনো পাঁচ মিনিট বাকী আছে। এমতাবস্থায় আমার রোজার হুকুম কি ?

উত্তর: প্রশ্নে উল্লিখিত অবস্থায় আপনার জন্য পুনরায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরী এবং উক্ত দিনের পরিবর্তে আরেকটি রোজা কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না।
(শামী ৩/৪৩৬-৪৩৯, বুখারী ১/২৬৩, সুনানে আবু দাউদ ১/৩২২ )

২১ প্রশ্ন: আমি রোজা রেখে দুপুরে রোজার কথা ভুলে যাই এবং দুপুরের খাবার খেতে শুরু করি দুই তৃতীয়াংশ খাবার খেয়ে ফেলি এবং পরে আমি রোজাদার সে কথা স্মরণ হয়। আমার ধারনা অনুযায়ী খাবার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে গেছে তাই অবশিষ্ট খাবারটুকুও খেয়ে ফেলি। আমার জানার বিষয় হলো, রোজার কথা ভুলে গিয়ে খাবার খাওয়াতে কি রোজা ভেঙ্গে গেছে এবং পরবর্তীতে আমার স্মরণ আসার পর ইচ্ছাকৃত খাবার গ্রহণের দ্বারা কি কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে ? 

উত্তর: রোজার কথা ভুলে গিয়ে খাবার খাওয়ার কারণে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়নি এবং পরবর্তীতে স্মরণ আসার পর রোজা ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার ধারনার উপর ইচ্ছাকৃত ভাবে খাবার খাওয়াতে কাফফারা ওয়াজিব হয়নি, তবে কাজা আদায় করতে হবে। (শামী ৩/৪১৯, তাতারখানীয়া ৩/৩৭৫, হিন্দীয়া ১/২৬৩-২৬৮)

২২ প্রশ্ন: সেহরী এবং  ইফতারীর সময় নির্ধারণের জন্য ঘড়ি ব্যবহার করা কি জরুরী, নাকি আলামত দেখে সেহরী এবং ইফতারি করলে রোজা সহিহ হবে, কেন না আমরা জানি নবীজি এবং সাহাবাদের যামানায় ঘড়ি ছিল না।

উত্তর: সেহরী এবং  ইফতারির সময় নির্ধারণের জন্য ঘড়ি ব্যবহার জরুরী না বরং আলামত দেখে সেহরী এবং ইফতার করলে ও রোজা সহিহ হবে। 
(বুখারী ১/২৬২, হিন্দীয়া ১/২৫৬, তাতারখানীয়া ৩/৩৫২)

২৩ প্রশ্ন: একবার রোজা রেখে আমি মেসওয়াক করতেছিলাম। মেসওয়াকের ছোট একটি অংশ গলার ভিতরে ঢুকে যায়। প্রশ্ন হল এতে আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে কি ?

উত্তর: প্রশ্নে বর্ণিত ছুরতে আপনার রোযা ভেঙ্গে গেছে। এবং তা ক্বাযা করা ওয়াজিব তবে কাফফারা ওয়াজিব নয়। (শামী ৩/৩৬৯, তাতারখানীয়া ৩/৩৮০, হিন্দীয়া ১/২০২)

২৪ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় এন্ডোস-কপি করলে রোজা ভাঙ্গবে কি ?

উত্তর: এন্ডোস-কপি করালে রোযা ভঙ্গ হবে না , সাধারণত এন্ডোস কপিতে নল বা বাল্বের সাথে কোন মেডিসিন লাগানো থাকে না, তাই এন্ডোস কপির কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না, তবে নল বা বাল্বে কোন মেডিসন লাগানো থাকলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তেমনিভাবে টেষ্টের প্রয়োজনে কখন ও পাইপের ভেতর দিয়ে পানি ছিটানো হয়। রমজানে এমন করলে ও রোযা ভং হয়ে যাবে। তবে সকলের জন্য উচিত হল, বাইওরে কিংবা রমজানে হলে রাতের বেলায় এন্ডোস কপি করানো একান্ত অপারগতা ব্যতীত রোযারেখে এন্ডোস কপি করানো উচিত নয়।
(শামী ৩/৪৩২, হিন্দীয়া ১/২৬৬, বাহরুররায়েক ২/৪৮৮) 

২৫ প্রশ্ন: আমার জানার বিষয় হল মহিলাদের হায়েজ নেফাস চলা-কালীন নামাজ রোজা করা নিষেধ, আমি জানি এম্ন অবস্থায় নামাজ কাজা করতে হয় না , রোজার হুকম ও কি এমন ?

উত্তর: রোজা কাজা করা আবশ্যক, কেননা মাসিক মহিলাদের প্রতি মাসে তিন থেকে দশ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে, এ সময়ে তাদের উপর অনেক গুলো নামাজের কাজা জমা হয়ে যায়, যা আদায় করা ক্ষট সাধ্য। পক্ষান্তরে রোজা যেহেতু বছরে তিন থেকে দশটির বেশি কাজা হয় না , তাই তার কাজা আদায় করা আবশ্যক। 
(শামী ১/৪৮৪, ফাতহুল কাদীর ১/১৬৭, বিদায়েউসসানায়ে ১/১৬৩)  

২৬ প্রশ্ন: দুগ্ধপোষ্য সন্তানের স্বাস্থের অবনতী ঘটবে এ আশঙ্কায় মায়ের জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে কি ?

উত্তর: গর্ভবতী ও দুগ্ধদান কারিনীর জন্যে নিজের অথবা সন্তানের মৃত্যুর বা অসুস্থ হয়ে পড়ার কিংবা অসুস্থাতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে, অথবা রোজার কারণে যদি শিশুর খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় , বা মায়ের দুধে এত ঘাটতি আসে যে তা পান করে শিশুর স্বাভাবিক শরীর গঠন কিংবা মেধা বিকাশে বাধা সৃষ্টিহয়, তাহলেও তার জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে, তবে শুধু স্বাস্থ্যের অবন্তির আশঙ্কায় রোজা না রাখার অবকাশ নেই। 
(ফাতহুল কাদীর ২/৩৬১, বাদায়েউসসানায়ে ২/২৫০, বাহরুররায়েক ২/৪৯৯)
  
২৭ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় শরীরে ইঞ্জেকশন দেওয়ার হুকুম কি ?

উত্তর: রজা অবশ্তহায় ইঞ্জেকশন দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না । তবে শক্তি সৃষ্টির জন্য গ্লুকোজ বা খাবার জাতীয় ইঞ্জেকশন দেওয়া মাকরুহ। আর যদি এমন কোন জায়গায় ইঞ্জেকশ্ন দেওয়া হয় যার দ্বারা ঔষধ পাকস্থলী অথবা দেমাগে চলে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। 
(বাদায়েউসসানায়ে ২/২৪৩, কাজীখান ১/১৩১, দারুল উলূম ২/৪১১)

২৮ প্রশ্ন: আমি সাধারনত গ্যাসট্রিক রোগে ভূগি । এক বেলা না খেয়ে থাকলে গ্যস্ট্রিক এর মাত্রা বেড়ে যায়। আর সারাদিন না খেয়ে থাকলে তো তা পেকট আকার ধারন করে। বিজ্ঞ ডাক্তার থেকে চিকিৎসা গ্রহনের মাধ্যমে ঔষধ সেবনের পর ভাল থাকি। প্রশ্ন হলো এমতাবস্থায় আমি রোজা না রেখে ফিদিয়ে দিয়ে দিলে কি জায়েজ হবে ?

উত্তর: আপনার অসুস্থাতা যদি এমন হয় যা কখনও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং এভাবেই আপনি মৃত্যু প্ররযন্ত উপনীত হোয়ার আশ্নগকা হয় । তাহলে আপনাকে রোজার  পরিবর্তে ফিদিয়া দেওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর যদি কোন এক সময় আপনি সুস্থ হয়ে যান তাহলে আপনাকে ঐ রোজাগুলির কাজ্বা আদায় করতে হবে। 
(শামী ৩/৪৭১, ফাতহুল কাদীর ২/৩৬২-৩৬৩, আপকে মাসায়েল ৩/২৭২)
  
২৯ প্রশ্ন: আমি এ বছর রমজানে অসুস্থাতার কারণে দুটি রোজা রাখতে পারিনি , শয়তানের প্ররোচনায় তিনটি রোজা ইচ্ছেকৃত রাখিনি, এখন আমার ভুল বুঝে এসেছে । জানার বিষ্য হলো এ সবগুলি রোজার জন্য কাজা কাফফারা হিসাবে কয়টি রোজা রাখতে হবে এবং তা কিভাবে ?

উত্তর: আপনার জন্য পাঁচটি রোজা কাজ্বা আদায় করতে হবে । কাফফারা দিতে হবে না। এবং যে সমস্ত দিন গুলোতে রোজা রাখা হারাম সেগুলোব্যতীত যে কোন দিন আপনি আদায় করতে পারেন। এক্ষত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষাকরাও আবশ্যক নয়। 
(শামী ৩/৩৭৭, বাহরুররায়েক ২/৫০৮, হিন্দীয়া ১/২২৪)

৩০ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় ন্যাজল স্প্রে কিংবা কান অথবা চোখে ড্রপ ব্যভার করলে রোজা ভঙ্গ হবে কি?

উত্তর:  রোজা অবস্থায় ন্যাজল স্প্রে কিংবা কান অথবা চোখে ড্রপ ব্যভার করলে যদি তা দেমাগে বা পেটে পৌছে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে চোখে ড্রপ ব্যভার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (হিন্দীয়া ১/২৬৬, বাহরুররায়েক ২/৪৮২, শামী ৩/৪৩২)

৩১ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যভার করার বিধান কি ?

উত্তর: রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যভার করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় । যদি একান্ত শ্বাসকষ্ট থেকে বাচার জন্য ইনহেলের ব্যভার করে তাহলে উক্ত রোজার ক্বাযা আদায় করা আবশ্যক, কাফফারা দিতে হবে না , তবে যদি সব সময় তা ব্যবহারকরতে হয় এবং  সুস্থতার আশা না থাকে তাহলে সে রজার বিনিময়ে ফিদয়া দিবে। (শামী ৩/৩৬৬, ফাতহুল কাদীর ২/৩৩৭, হিন্দীয়া ১/২১৮)

৩২ প্রশ্ন: গতরমযানে অসুস্থতার কারণে ১১ থেকে ২০ তারিখ প্ররযন্ত রোযা রাখতে পারি নি , এখন আমি তা কাযাকরার নিয়ত করেছি, এক্ষেত্রে আমাকে কি ধারাবাহিক ভাবে রোযা রাখতে হবে ? নাকি মাঝে বিরতি দিয়ে রাখলে হবে ?

উত্তর: না, আপনাকে ধারাবাহিক ভাবে রোযা রাখতে হবে না, বরং আপনার ইচ্ছা, ধারাবাদিক ভাবে অথবা পৃথক পৃথক ভাবে রাখতে পারবেন, কেননা ক্বাযা রোযা আদায়ের ক্ষত্রে ধারাবাহিকতা শর্ত নয়। (বুখারী ১/২৬১, বাদায়েউসসানায়ে ২/২১২, মাহমুদীয়া ১৫/১৯৫)
  
৩৩ প্রশ্ন: আমার জানার বিষয় হল , হারাম মাল দিয়ে ইফতারী করার কারণে উক্ত রোযার কাযা বা কাফফারা দিতে হবে কি ?

উত্তর: হারাম মাল দ্বারা ইফতারী করা মাকরুহ এবং তা পরিহার করা প্রত্যেকের উপর আবশ্যক। তবে এর দ্বারা রোযার ফরজ আদায় হয়ে যাবে, কাযা বা কাফফারা দিতে হবে না।
(শামী ২/৪৩১, হিন্দীয়া ১/২২০, বাহরুররায়েক ২/৫৪১)

৩৪ প্রশ্ন: রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়ার হুকুম কি ?

উত্তর:  অবস্থায় রক্ত দেওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়না। তবে যদি রক্ত দেওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা হয় তাহলে মাকরুহ।
(বুখারী ১/২৬০, শামী ৩/৪২১, তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫)

৩৫ প্রশ্ন: আমি এক বার রোজা রেখে শরয়ী সফরের দূরত্বের প্রতি রওয়ানা হই, মূলত দিনের অর্ধাংশ অতিবাহিত হবার পর শরয়ী সফরে রওয়ানা হয়েছি এমতাবস্থায় আমার রোজা ভাঙ্গার অবকাশ আছে কি ?

উত্তর: আপনার ঐ দিন রোজা ভাঙ্গার কোন অবকাশ নেই, তবে অতিরিক্ত কষ্টের কারণে রোজা ভঙ্গ করতে পারবেন, কিন্তু সফরের কারণে রোজা ভঙ্গ করতে পারবেন না, হা যদি রোজা ভেঙ্গে ফেলেন তাহলে কাফফারা দেওয়া লাগবে না। 

(তাতারখানীয়া ৩/৪০৩, কাযীখান ১/১২৮, আহসানুল ফতুয়া ৪/৪৪৭) 

Comments

  1. ডাক্তার যদি ৩ বেলা ঔষধ খওয়া বাধ্যতামূল করে দেয় তাহলে আমার রোজা রাখার বিধান কি..?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নামাজ প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯৬ টি - দলিল সহ  ০১ প্রশ্ন: সেজদার জায়গায় ধুলা-বালি থাকলে নামাজের মধ্যে ফুঁ’দিয়ে তা দূর করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?  উত্তর: সেজদার জায়গায় ধুলাবালি থাকলে যদি তা ফুঁ দিয়ে দূর করার কারণে আওয়াজ সৃষ্টি হয় তাহলে নামাজ-নষ্ট হয়ে জাবে,অন্যথায় নামাজ নষ্ট হবে না,তবে-ইচ্ছাকৃত এরূপ করা মাকরূহ।আর যদি সেজদার জায়গায় কষ্টদায়ক কোন কিছু থাকে যার কারণে সেজদা করতে অক্ষম হয় তখন তা হাত দিয়ে সরিয়ে দিবে। (হিন্দীয়া ১/১৫৯, ক্বাযীখান ১/৭৪) ০২ প্রশ্ন: মহিলারা বৈঠকের সময় কিভাবে বসবে, পুরুষদের মতই-নাকি তাদের থেকে ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে ? উত্তর: মহিলারা বৈঠকের সময় পুরুষদের মত বসবেনা,বরং সে তার বাম নিতম্বের উপর বসবে এবং তার উভয়-পা ডান দিকে বের করে দিবে। ( হিন্দীয়া ১/১৩৩, রাহিমীয়া ৫/৭৫) ০৩ প্রশ্ন:নামাজে কেউ দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে ফেলে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না? উত্তর: কোন ব্যক্তি যদি ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে ও ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাআতে সূ্রা মিলানোর পূর্বে দুইবার সূ্রা ফাতেহা পড়ে তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।আর যদি সূ্রা মিলানোর পরে দ্বিতীয়বার প

পবিত্রতা প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৪৮ টি - দলিল সহ ০১ প্রশ্ন: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়ার বিধান কি ? উত্তর: ফরয গোসলে নাকে পানি দেওয়া ফরয।   (শামী ১/৩১১, বাদায়েউসসনায়ে ১/১৪২, হাক্কানীয়া ২/৫২১) ০২ প্রশ্ন: অনেকে বলে থাকেন, অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়, এতে সওয়াব কমে যায়, কথাটি কি সঠিক ? অজুর পর হাতমুখ মোছার বিধান কি ? জানালে কৃতঙ্গ থাকব।  উত্তর: অজুর পর কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছাতে কোন সমস্যা নেই, বরং কেউ কেউ একে অজুর আদব এবং মুস্তাহাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সুতরাং যারা বলে যে অজু করে কাপড় দিয়ে হাত মুখ মোছা উচিৎ নয়। এতে সওয়াব কমে যায় তাদের এ কথা সঠিক নয়।  (শামী ১/২৭৯, হিন্দীয়া ১/৬৫, দারুল উলুম ১/১৩১ ) ০৩ প্রশ্ন: আমি মেহেদী পাতা বেটে হাতে দেই পরবর্তিতে আমার মেয়ে জানায় মেহেদীর মধ্যে নাপাক পানি পড়ে তা নাপাক হয়ে গেছে, এখন আমার জানার বিষয় হল নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর হাত পবিত্র করার পদ্ধতি কি। উত্তর: নাপাক মেহেদী দ্বারা হাত রঙ্গিন করার পর পরিষ্কার পানি বের হওয়া পর্যন্ত হাত ধৌত করলে হাত পবিত্র হয়ে যায়। যদিও রং বাকি থাকে। (শামী ১/৫৯০,  হিন্দীয়া ১/৯৬, ক্বাযীখান ১/১

ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে - পুরো অধ্যায়

প্রশ্ন আছে ৯ টি - দলিল সহ ০১ প্রশ্ন: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রি করার বিধান ? উত্তর: কিস্তিতে বেশি দামে পন্য বিক্রিওয় জায়েজ। যেমন আমাদের দেশে প্রচলিত ফ্রিজ, ফার্নিচার, ফ্ল্যাট ইত্যাদি দুই পদ্ধতিতে বিক্রি করা হয়। নগদ দাম দিয়ে কিনলে কম মূল্য আর কিস্তিতে কিনলে  বেশি মূল্য। ফুকাহায়ে কেরাম এ পদ্ধতিকে বৈধ ঘোষনা করেছেন। যেহেতু এখানে সুদের সম্ভাবনা নেই। কেননা পন্য এবং মূল্য একই জিনিসের নাহলে বাকিতে বা বাকিতে বিক্রি করা জায়েজ। তাই এ  জাতীয় ক্রয় বিক্রয় জায়েজ। (হেদায় ৩/৭৯, আলমগীরী ৩/১৩৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪০) ০২ প্রশ্ন: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করার বিধান ? উত্তর: মানুষের রক্ত, চুল, নখ ইত্যাদি বিক্রি করা হারাম। কেননা মানষের প্রত্যেকটি অঙ্গকে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা দিয়েছেন, তাই সমস্ত মানুষের কোনো অঙ্গ বিক্রিকে ফুকাহায়ে কেরাম নাজায়েজ ঘোষনা করেছেন। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে মানুষের নখ, চুল, রক্ত ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে, যা সম্পূর্ন নাজায়েজ। তবে কঠিন বিপদের মূহুর্তে রক্ত পাওয়া নাগেলে, রক্ত কিনার অনুমতি বয়েছে, কিন্তু বিক্রি সর্বাবস্থেয় নাজায়েজ। আওর স্বাধীন মানুষ বা তার কোন অঙ্গ বিক